বিকেলে সবাই একসাথে। চা এবং চপ সহযোগে। শুধু খ্যাম্পুর জন্যে থিন অ্যারারুট বিস্কুট আনানো হয়েছে। মণিপুরের ছেলে। এত ভাজা বড়া সহ্য হয় না ওর।
এই গ্রুপে সেই একমাত্র বাঙালি নয়। কিন্তু বাঙালিদের যা স্বভাব, এত বেশি ওর সঙ্গে বাংলা কথা বলা হয় যে অনেক কিছু শিখে গেছে।
ড্রাইভার আর তার সহকারীকে মুখ্য জেরা সেই করেছিল।
আলোচনা হচ্ছে কি করা যায় এরপর।
সে বললো, ড্রাইভার আর তার হ্যান্ডিম্যানকে আর বেশি কচলিয়ে লাভ নেই। ওই গাড়িটাই চালাবার কাজে ওদের ব্যবহার হতো। এখন অবধি চারবার ট্রিপ করেছে। ওদের কাজ ছিল ওই নির্দিষ্ট জায়গা অবধি গাড়িটা এনে ফিরে যাওয়া। তারপর দিন পনেরো পরে, ওই জায়গা থেকেই গাড়িটা ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই আসা যাওয়ার প্রতি ট্রিপে প্রাপ্য হতো চল্লিশ হাজার টাকা। এর থেকে ড্রাইভার নিত পঁচিশ আর তার সহকারী পনেরো। মাল কোথায় লোড হতো, এটা জানে না। ওদেরকে খবর দিয়ে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে বলা হতো, সেখান থেকে গাড়ি স্টার্ট করে আসা আর ফেরতও সেখানেই রাখা। হ্যা… ওরা জানতো নিশ্চয়ই কিছু দু-নম্বরি মাল পাঠানো হয়। কিন্তু টাকাটা খুব লোভনীয়। তাই তিনমাসে চারটে ট্রিপ মেরেছে।
খ্যাম্পু বলল, এদেরকে আর একসাথে না রাখাই ভালো। এরা বুজেছে যে বড্ড বিপদে পড়েছে। ওই বিহারী ছেলেটার জন্যে। ওরই কথায় শুরু করেছিল এই কাজটা। রেগেমেগে একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারে। সুতরাং ওদের লোকাল থানায় লকআপে রাখলেই ভাল হয়। অফিসের সিপাইদের উপরও চাপ কমে।
এরকমটা হয়। থানায় লকআপে নিয়ে রাখা যায়। অল্প কাগজপত্তর আর আটক রাখার কোর্টের কাগজ দেখাতে হয়। বিশ্বরূপদা বানিয়ে ফেললেন ঝটপট। আর যেহেতু আইডিয়া খ্যাম্পুর, সুতরাং সেপাই শাস্ত্রী নিয়ে তাকেই যেতে হল জমা করিয়ে আসতে।
সে বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরেই ঢুকলেন বিভাসদা। সঙ্গে সেই হোটেলের মালিক ভূষণ। অমিতের মনে পড়লো, এই জন্যেই তখন রুমের ভিতর তিনজনকে দেখে ছিল। খেয়ালই ছিল না এর কথা।
বিভাসদা সারাদিন ঘুরেছেন ওকে নিয়ে। সেকেন্ড সেট-এ যে ড্রাইভার আর সহকারীর গাড়িটা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, তাদের খোঁজে। কিন্তু ওরা জাস্ট হাওয়া হয়ে গিয়েছে। ভূষণের জানা জায়গা থেকে। এটাই অবশ্য স্বাভাবিক। এরকম গণ্ডগোলি জিনিস নিয়ে যারা ঘাটাঘাটি করে, বিপদের গন্ধ পেলেই তারা সবচেয়ে প্রথম গা ডাকা দেয়। কোন সুলুকসন্ধান না রেখে। ভূষণের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না, আজকের পুরো দিনটা খুব ভাল কেটেছে।
দীপঙ্করদা বললেন , শেষ ভাল খবরটা তাহলে আমিই দি। গাড়ির দু’টো রেজিস্ট্রেশন নম্বরই ভুয়ো। খবর নিয়েছি দুই রাজ্যের দুটো ডিটিও অফিস থেকেই। তার পর চেসিস নম্বর গাড়ির নীচে থেকে বড্ড কষ্ট করে বের করা হয়েছে। হারামজাদাগুলো ওটাকেও ঘষে ঘষে যথেষ্ট নষ্ট করে দিয়েছে। তবু মোটামুটি আন্দাজে দু’টো নম্বর বানিয়ে, আপাতত গাড়ি তৈরি হয়েছে যে কারখানায়, সেই প্রস্তুতকর্তাদের অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। দেখ কবে রিপ্লাই পাওয়া যায়। পেলেও দেখবি, এটা চুরির গাড়ি। মালিক কবেই রিপোর্ট করে রেখেছে, গাড়ি চুরি হয়েছে বলে।
কিছুক্ষণ সবাই চুপ করে বসা। তারপর নীরবতা ভেঙে অমিত বললো, সব লিডই তো শেষ হয়ে এসেছে। এই চারটাকেই নিয়ে তাহলে চার্জশিট বানাতে হয়।
তদন্তকারীদের জন্যে এ বড় অসহায় অবস্থা। কত কিছু করার থাকে, অথচ রাস্তা মেলে না। গল্পটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
এই বিহারী ছেলেটি মাল কিনে, ড্রাইভার জোগাড় করে রওনা দিয়েছে ঠিকই— কিন্তু পুরো ফিন্যান্স, মাল বিক্রির ব্যবস্থা— একটা পাহাড়ি রাজ্যে থেকে, সেখান থেকে গিয়ে… করাটা অসম্ভব যেন লাগে।
ছেলেটা মুখ খোলেনি। এই কয়েক দিনে কম আদর যত্ন হয়নি। কিন্তু কিচ্ছু লিড পাওয়া যায়নি। আদর যত্নেরও একটা লিমিট আছে। তিনদিন পর মেডিক্যাল করাতে গিয়ে গন্ডগোল পেলে, নিজেদেরই অসুবিধা হয়ে যেতে পারে।
মরুক গে। মিনিমাম দশ বছর জেলের ঘানি টেনে বেরুক। কার কি এসে যায়।
এর থেকে ব্রিজ খেলা ভাল। আজকে দীপঙ্করদাকে পার্টনার নিয়ে খেলা যাক।
অফিস টুর্নামেন্ট আসছে। টেকনিক্যাল ব্রাঞ্চের হেড, সুপারিনটেনডেন্ট পি কে দাস স্যার আবার চাইছেন অমিতরা যেন অফিসের হয়ে খেলে।
(ক্রমশ )