পঞ্চায়েতের ফরমান মাথায় বয়ে পুলিশের দ্বারস্থ দ্বিতীয় বার সংসার পাততে চাওয়া ওই মহিলা
গোপনে বহুগামিতা নয়, রীতিমতো বিয়ে করে পলিগ্যামি (polygamy)। কেস একই, কিন্তু লিঙ্গভেদে তার স্টেটাস আলাদা। রাজস্থানের বারমেঢ় জেলা। দ্বিতীয় বার বিয়ে করার অপরাধে প্রথমে খাপ বসালো পঞ্চায়েত। একটা নয়, আশপাশের আরও বিস্তর গ্রামের মুরুব্বিরা এসে জুটেছিল খাটিয়া পেতে। তারপরেই নিদান— কিচ্ছু করার নেই, ১১ লাখ টাকা ফাইন দিতে হবে। জরিমানা না-দিলে রেহাই নেই। দিতেই হবে। তা সে জমি-বাড়ি বেচে হলেও দিতে হবে। অনাদায়ে ওই মহিলার যাবতীয় আত্মীয়-স্বজনেরও ধোপা-নাপিত বন্ধের হুমকি দেন মুরুব্বিরা। গত বছর ১৭ অক্টোবরের ঘটনা। পঞ্চায়েতের ফতোয়া শুনে মাথা হেঁট, পেট পর্যন্ত ঘোমটার আড়াল থেকে টপটপ করে জল পড়েছিল শুধু বধূর। কিন্তু মরুভূমের তপ্ত বালিতে তারই বা আর কতক্ষণ আয়ু। না, টাকার অঙ্কটা ছাড়া এর মধ্যে তেমন বড় কোনও খবর নেই। ব্রেকিং নিউজ় তো নয়ই। তবু জেলাটা বারমেঢ় বলেই আচমকা যেন ব্রেক কষতে হয় আচমকা। এটাই তো সেই জেলা না, যেখানকার দেরসার গ্রামে অন্তত দু’টো বিয়ে না-করলে নাকি একঘরে করে দেওয়া হয় পুরুষকে!
হ্যাঁ, এটাই ট্র্যাডিশন। যাকে বলে, কালচারাল হেরিটেজ। শতাব্দীপ্রাচীন প্রায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। পাকিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া এই গ্রামে সব মিলিয়ে ৭০০ মতো ভোটার। আর মধ্যে পুরুষ মানেই ব্যাপার আলাদা। এঁদের একটাতে হয় না, এক ছাদের নীচে দু’টো বউ অন্তত লাগবেই। পলিগ্যামি, কিন্তু খানিক অদ্ভুতুড়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে মরুভূমের এই বীরপুরুষরা শয্যা শেয়ারেও নারাজ। কী হবে মিলিত হয়ে? প্রথম স্ত্রী মানে তো বাঁজাই! বাপ-ঠাকুরদার থেকে এই সমীকরণই হজম করে এসেছেন বর-পুরুষরা। তা হলে খামোখা বিয়ে করে পরের বাড়ি থেকে মেয়ে ধরে আনা কেন? কারণ আছে। জীবনে কিছুই ফেলনা নয়। সন্তান দিতে না-পারুক, বাড়ির দাসীবাঁদি করে তো রাখা যায় প্রথমাকে! দ্বিতীয় বউয়ের সেবা করতে হবে, মাইলের পর মাইল ঠেঙিয়ে তপ্তদুপুরে ঘড়ায় ভরে জল আনতে হবে— কাজ কী সংসারে কম? গ্রামগুষ্ঠির ধারণা, সংসারে প্রদীপ দেখাবে ওই দ্বিতীয় বউই। তা সে অন্তঃসত্ত্বা হলে তখন তো তাকে আর জলযুদ্ধে ঠেলে দেওয়া যায় না! ওসব কাজ প্রথম স্ত্রীর জন্যই তোলা থাক।
বারমেঢ়ের ওই ‘পলিগ্যামাস’ রমণীর এ দিকে ১১ লাখ কেন, এক লাখ দেওয়ার অওকাত নেই। সে চোখের জল ফেলে, আর থানায় থানায় হানা দেয়। কেন তাকে বছর দেড়েক আগে দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলো, পুলিশকে তা জানায়ও ওই মহিলা। তার অভিযোগ, প্রথম পক্ষের বর নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করে জেলে। তাই সে ওই বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে এসে নতুন সংসার পাতার স্বপ্ন নিয়ে ফের বিয়ে করে। সব শুনেও তাঁর পক্ষ নেয় না পুলিশ। অথচ এই পুলিশ-পঞ্চায়েতই কিন্তু দেরসার গ্রামে কোনও পুরুমানুষের দ্বিতীয় বিয়েতে দিব্যি ভরপেট রাজস্থানি থালি সাঁটিয়ে যায়। আরে বাবা, ও তো পুরুষ নাকি! না, আংটি সোজা-বাঁকার কথা হচ্ছে না। এটাই ট্র্যাডিশন। পিছনে একটা গল্প আছে। সে আবার কী? সেটাই আসল। গল্পটা হল— শোনা যায়, এই গ্রামের এক দম্পতির বহু বছর বিয়ের পরেও সন্তান আসেনি সংসারে। পরিবারের পরামার্শে ফের বিয়ে করেন ওই পাগড়িধারী। এ বার জো়ডা গুড নিউজ়— এক সঙ্গে দুই স্ত্রীই গর্ভবতী। সুখ উপচে পড়ে সংসারের ঘড়ায়। ব্যস্, এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়—সন্তান চাও তো, আর একটা বিয়ে চাই-ই চাই। প্রথমটা তো দুদুভাতে। নেহাতই নম্বর। আর যে ব্যক্তি এই রীতি ভাঙার চেষ্টা করেন, তাঁকেই একঘরে করে দেওয়া হয় এখানে! এখনও নাকি এমন ঘটনাই ঘটে চলেছে গ্রামটিতে। যদিও এই ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কেউই। গ্রামবাসীদের কথায়, প্রথমবার বিয়ের পর অনেকেই দীর্ঘকাল সন্তানের জন্য অপেক্ষা করেছেন, এ রকম উদাহরণ প্রচুর রয়েছে। দ্বিতীয় বার বিয়ে করলেই কি হাতেনাতে ম্যাজিক? জবাব দিয়ে গিয়ে পারলে যেন পুরুষেরাই ঘোমটার আড়াল নেন! মিনমিনে উত্তর আসে— ‘বাপ, ঠাকুরদা তো তাই বলতেন।’ প্রথমটা তো বিবাহ, দ্বিতীয়টাই আসল— ‘শুভ বিবাহ’ ।